প্রকাশ :
২৪খবর বিডি: 'ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের বিস্ময় দেখে যুক্তরাষ্ট্রও 'প্রায় বিস্মিত'। কারণ, র্যাবের কর্মকােেদ্বগের বিষয়গুলো যুক্তরাষ্ট্র কয়েক বছর ধরে আলোচনায় তুলেছে। কয়েক বছর আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র এ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তবে র্যাবের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দুই দেশের বিস্তৃত সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করেন তিনি। তার ভাষায় 'আমাদের গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা রয়েছে।'
-গতকাল শুক্রবার মার্কিন দূতাবাসের নতুন অনুষ্ঠান 'অ্যামটকে' মার্কিন রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারভিত্তিক এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন পর্বে তাঁকে প্রশ্ন করেন দূতাবাসের মুখপাত্র কার্লা টমাস। অনুষ্ঠানে পিটার হাস বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, নির্বাচন, ভবিষ্যৎ সম্পর্কসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন। তাঁর মতে, কিছু বিষয়ে দু'পক্ষের মতপার্থক্য রয়েছে। সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হলে তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা বাঞ্ছনীয়।
-তিনি বলেন, 'এটা ঠিক যে, র্যাবের ওপর গত ডিসেম্বরে আমরা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি। তার পর থেকেই আমরা অনেকবার শুনেছি যে, বাংলাদেশ এতে কত অবাক হয়েছে। সম্ভবত তাদের এই বিস্ময় দেখে আমরাও প্রায় বিস্মিত। কারণ, ২০১৮ সালেই আমরা র্যাবকে প্রশিক্ষণ দেওয়া বন্ধ করেছিলাম। কারণ, মানবাধিকার নিয়ে আমাদের উদ্বেগ ছিল। বেশ কয়েক বছর ধরেই আমরা আমাদের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এসব উদ্বেগ প্রকাশ করেছি। বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও আমরা এসব তুলে ধরেছি। ফলে নিষেধাজ্ঞাটা বিস্ময় হিসেবে এলেও আমাদের যে উদ্বেগ ছিল, সেটি নিয়ে তো বিস্ময় থাকার কথা নয়।'
'এ নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা, সে বিষয়ে অনেকের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় বলে জানান মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, 'আমি শুধু তাদের বলি, এমন হতে হবে, আমি তা মনে করি না।' তিনি বলেন, 'আমাদের এই সম্পর্কে অনেক বিষয়ে দ্বন্দ্ব আছে। এতটা গভীর ও বিস্তৃত সম্পর্কের মধ্যে এ ধরনের দ্বন্দ্ব থাকাটা স্বাভাবিক। র্যাবসহ প্রতিটি বিষয়ে একসঙ্গে বসা ও কথা বলা দরকার। সেখানে হয়তো আমরা আমাদের চাওয়াটা বললাম আর বাংলাদেশ সরকারও বলল না যে, আমরা এটা করতে পারব না। সার্বভৌম দেশ হিসেবে তাও ঠিক আছে। এর পরও আমরা সম্পর্ক এগিয়ে নেব।'
র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের বিস্ময় দেখে যুক্তরাষ্ট্রও 'প্রায় বিস্মিত
'আলাপচারিতায় বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাষ্ট্রদূত বলেন, তাঁর স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, মার্কিন গণতন্ত্রও নিখুঁত নয়। তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাে র পর ব্যাপক আত্মমূল্যায়ন ও তর্কবিতর্ক হয়েছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে, তাদের কার্যপ্রণালি ও রীতিনীতি নিয়ে, তাদের জবাবদিহি নিয়ে। এটি এমন একটি বিষয়, যা নিয়ে লড়াই করতে হয়েছে, খোলামেলা বিতর্ক করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রজুড়েই। আবার জনগণ যুক্তরাষ্ট্রের শেষ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেখেছে। কারচুপির অভিযোগ এসেছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। এগুলো সবই হয়েছে এটি নিশ্চিত করার জন্য যে, গণতন্ত্র চলমান।''
-মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, 'আমি এটিও স্পষ্ট করতে চাই যে, নির্দিষ্ট কোনো দল বা ফোরামের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। এটা যুক্তরাষ্ট্রের কাজও নয়। তবে বাংলাদেশের মানুষ যা দেখতে চায়, আমরাও তা দেখতে চাই। সেটি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক মানের একটি নির্বাচন হবে, যেখানে বাংলাদেশের মানুষ তাদের পরবর্তী নেতাদের বেছে নিতে পারবে একটি অবাধ, প্রতিযোগিতামূলক, সহিংসতাবিহীন ও দমন-নিপীড়নমুক্ত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। শুনতে সহজ শোনালেও আমি বুঝি, এটা আসলে ততটা সোজা নয়। আমরা ঠিক এটাই খুব করে দেখতে চাই। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন যে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানাবে। আমার মনে হয়, এটা গুরুত্বপূর্ণ।'